Monday, September 16, 2013
কার্জন এবং বর্ণ'র ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানালো Hyper Edge। Ontor jala - Hyper Edge
Monday, July 22, 2013
সাড়ে ছয় বছর অপেক্ষা এবং আমার ধংস (real love story part 2)
কিছুদিন হলো একটা বিষয় খেয়াল করলাম। তা হলো বর্ণ যতদিন আমার জীবনে ছিলো ততদিন আমার জীবন টা সুন্দর ছিলো। আর বাকি সময় টা ছিলো অকল্পনীয় কষ্টের।
কিছুদিন হলো একটাায় আসি। সেই সময় বর্ণ না করে দেয়ার পর আমি পুরো ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম। বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। সবসময় একা থাকতাম। খুব খারাপ লাগতো তখন। কোনভাবে নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আগে বন্ধুরা মিলে শখ করে সিগারেট এ টান দিতাম মাঝে মাঝে। এই সময় টাতে তা নিয়মিত হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে আরো অনেক খারাপ কিছুর দিকে ঝুকে গেলাম। ( নাম উল্লেখ করলাম না। ) তখন আমার জীবনের অনেকটাই শেষ করে দিলাম। খুব ধীর গতিতে আমার পড়া লেখা চলল। মানে পড়াশুনা করতে হবে বলে করা আর কি। এস.এস.সি পাশ এর পর ডিপ্লোমা শুরু করলাম। বিষয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এর মাঝে ক্লাস ১০ এ উঠার পর মাথায় একটা চিন্তা এল, তা হলো " আমি কি দেখতে এতই খারাপ অথবা আমার চলাফেরা কি এতই খারাপ যে বর্ণ এর জন্য আমাকে পছন্দ করে নাই" । এর পরে ভাবলাম তাহলে অন্য মেয়েদের সাথে মিশে দেখি তাদের কাছ থেকে কেমন feedback পাই। ( একটা কথা বলে রাখি। এই ক্লাস ১০ এর আগে পর্যন্ত আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে বিব্রত ও লজ্জাবোধ করতাম। ) প্রথমে মনোহরদী পাইলট হাই স্কুল থেকে ক্লাস নাইন এর একটা মেয়েকে প্রপোজ করলাম। তাও নিজে পারি নাই। একটা বন্ধু কে দিয়ে করেছি। কয়েকদিন পর রাজি হলো। কিন্তু মজার কথা হলো ওই মেয়ে টা ১ বছর মনোহরদী ছিলো। এর মাঝে তার সাথে কথা হয়েছে মাত্র ৩ টা।
★ কেমন আছো
★ আমাকেও একটু পানি দিও
★ সৈকত কে একটু ডেকে দিও
এই ৩ টা কথাই হয়েছে তার সাথে।
এই শুরু হলো আমার মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করা। সেই সময় থেকে এর পরের সাড়ে ছয় বছরে আমি সর্বোমোট ৯৮ টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি। (বর্ণ ছাড়া। )
যাই হোক, ২০১০ থেকে আমি আপুর সাথে ঢাকা থাকতে লাগলাম। তখন আমি পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপু কে কখনো বুঝতে দেই নাই। আমি প্রতিদিন ক্লাস না করলেও পরীক্ষা গুলো ভালোভাবেই দিতাম। ৩য় সেমিস্টার এর মিড টার্ম পরীক্ষা শুরু হলো। আমি প্রথম পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানতে পারলাম যে আমার ১৫০০ টাকা বাকি আছে। আমি প্রথমে দীপা কে কল করে বললাম এই কথা। সে বললো বাবা কে বলতে। আমার মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই ভাবলাম যে বাবা কে সন্ধায় কল করবো। সন্ধায় কল করার পর প্রথমেই বাবা কে বললাম যে আমার কিছু টাকা লাগবে। কিসের টাকা তা কিন্তু আমি বলি নাই। টাকা লাগবে শুনেই বাবা বলল যে আমি তো এই পরীক্ষার আগে সব টাকা ক্লিয়ার করেছি। তাহলে আবার কিসের ১৫০০ টাকা লাগবে? আমি বললাম যে এই টাকা টা অতিরিক্ত কিসের যেন ফি। আমি ঠিক জানি না। বাবা রেগে বললো। তুমি অযথাই ঢাকা পরে আছো। তুমি পড়ালেখা করনা। তুমি এমনিতেই আমার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছ। আমি আর টাকা দিবো না। তুমি আজকেই মনোহরদী চলে আসো, এমন আরো অনেক কিছুই বললো।
( আমার প্রশ্ন: আমি তো বাবা কে বলি নাই কিসের জন্য টাকা চেয়েছি। আর বাবা কিভাবে জানলো যে আমার ১৫০০ টাকাই লাগবে। এই ফিস এর ব্যাপার টা আমি শুধু দীপা কে বলেছি। আপুকেও বলি নাই। ) আমি আমার পরীক্ষার জন্য টাকা চাওয়ার পর যখন এসব শুনতে হলো, খুব কষ্ট লেগেছিলো। আমি তখন ৪ টা পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম। আমার ওই টাকা টা বাকি থাকার কারনে দিতে পারি নাই। এর পর ক্লাস পরীক্ষা সব বন্ধ। সারারাত নেট এ বসে থাকতাম আর ওই নেশার জিনিস গুলো খেয়ে নিজের জীবন টাকে ধংস করতাম। নেট থেকে এক বড় ভাই এর মাধ্যমে একটা চাকরী পাই। একটা সনামধন্য কোম্পানি'র web developer and website security in charge হিসেবে। প্রতি মাসে ভালো টাকা পেতাম। শুধু এটুকু বলি, বাবা প্রতি মাসে আমাদের থাকা খাওয়ার জন্য যেই টাকা টা দিত তার থেকে দ্বিগুণ এরো বেশী। সুতরাং আমার জীবন নষ্টের জন্য যা লাগতো তার টাকা টা আমি পেয়ে যেতাম। আমি তখন আবার পড়ালেখা শুরু করতে পারতাম কিন্তু করি নাই কারন বাবার ওই আচরন এবং আমাকে নিয়ে আমাদের পরিবারের ওই সমস্যা।
সারারাত নেশা এবং নেট নিয়ে থাকতাম। আর বিকাল পর্যন্ত ঘুমাতাম। বিকালে বের হয়ে টুকটাক কাজ এবং আমার জিনিস গুলো জোগার করতাম। বাসায় এসে রাতে খেয়ে আপু শুয়ে পড়তো আর আমি আমার রুমে কম্পিউটার চালু করে প্রথমে বর্ণ'র ছবি দেখতাম। ছবি দেখার সময় মনে মনে বলতাম " বর্ণ আমার থেকে বেশী কেউ তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না।"
কথা টা ১০০% সত্যি। এভাবেই আমি নিজেকে শেষ করছিলাম আর একের পর এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করছিলাম। ( কোন মেয়ের সাথেই একবার দেখা হওয়ার পর আর তার প্রতি কোন আগ্রহ থাকতো না। ) আর প্রতিটা মেয়ে কে আমি বর্ণ র কথা বলেছি। তারা এটাও জানতো যে বর্ণ আমার জীবনে আসলে তাদের আমি ভুলে যাবো। এভাবেই বর্ণ কে হারিয়ে এবং আমার পরিবারের কাছ থেকে এসব কষ্ট পেয়ে সবার সামনে থেকেও সবার অযান্তে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছিলাম।
এসবের মাঝেও আমি ওই সাড়ে ছয় বছর যে কয়বার সুযোগ পেয়েছি বর্ণ কে প্রপোজ করেছি। প্রায় সব ঈদ এর কয়েকদিন পর বর্ণ রা সবাই মনোহরদী আসতো। তারা আসার আগেই আমি দীপা কে অনুরোধ করতাম যাতে হোন্ডা দিয়ে বর্ণ কে নিয়ে ঘুরতে পারি। সে বেশ কয়েকবার সুযোগ করে দিয়েছে। হোন্ডা দিয়ে ঘুরার সময়ও তাকে প্রপোজ করতাম। সে না করে দিত। আমি তারপরেও হাল ছারতাম না। ২০১০ এর সেপ্টেম্বর এর ২৪ তারিখ আপুর বিয়ে হয়ে গেলো। আমি তখন পুরা একা হয়ে গেলাম। আপুর বিয়ের কিছুদিন পরেই ছিল ঈদ। ঈদ এর পর বর্ণ রা আসলো মনোহরদী। সবাইকে নিয়ে হোন্ডা দিয়ে ঘুরে সবার শেষে বর্ণ কে নিয়ে বের হলাম। আমাদের বাসা থেকে ৭ কি: মি: দূরে একটা মাজার আছে। শাহ ইরানী মাজার। তাকে সেখানে নিয়ে গেলাম। সেখান থেকে আসার পথে তাকে প্রপোজ করলাম। সে না করলো। বর্ণ রা চলে যাওয়ার পর দীপা জানতে চাইলো যে এবার তাকে প্রপোজ করেছি কি না। আমি বলেছি যে করেছি কিন্তু রাজি হয় নাই। সে তখন বলল যে এত মেয়ের সাথে সম্পর্ক করলা কিন্তু একমাত্র তাকেই রাজি করাতে পারলা না। আমি আর কিছু বলি নাই। এর পর তারা আরো ২ বার মনোহরদী এসেছিলো কিন্তু বর্ণ হোন্ডা দিয়ে ঘুরেনি। পরে জানতে পারলাম আমি তাকে নিয়ে ঘুরতে গেলেই যে তাকে প্রপোজ করি এটা দীপা আলো আন্টি কে বলে দিয়েছে। তাই আর আমার সাথে ঘুরতে দেয় না।
এসব ঘটনার মাঝেই সাড়ে ছয় বছর কাটলো।
এর পরই আবার সব বদলালো।
আয়েশা আফরোজ বর্ণ প্রথম আসলো আমার জীবনে (real love story part 1)
আয়েশা আফরোজ বর্ণ।
তাকে দেখার আগে আমি তার ছবি দেখেছি। বাবা যখন দীপা'র বাসায় প্রথম যায় তখন সবার ছবি তুলে এনেছিল। সেখানেই বর্ণ'র ছবি প্রথম দেখি এবং তার ছবি আমার মোবাইলে ওয়ালপেপার করে রাখি। এটা ছিলো আমার ভালো লাগা। তখন আমি ক্লাস ৮ এর শেষ পর্যায়। এটা ছিলো কোন মেয়েকে প্রথম ভালো লাগা। বাবার বিয়েতে আমি তাকে অতটা খেয়াল করি নাই। (আসলে তখন আমার মানসিকতা এতটাই খারাপ ছিলো যে বর্ণ কে নিয়ে ভাবা বা তাকে খেয়াল করে দেখার পরিস্থিতি ছিলো না।) যাই হোক তারপর যখন কয়েকদিন পর মনোহরদী আসলো আমাদের নিতে সেদিন আমার চোখ শুধু তার দিকে চলে যাচ্ছিল। এত মানুষের মাঝে কেউ যদি বিষয় টা খেয়াল করে তাই আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। তারপর তাদের সাথে ঢাকা গেলাম। আমি বর্ণ কে যত দেখছি ততই ভালো লাগছে। আমি সবার ছবি তোলার বাহানা দিয়ে তার ছবি বেশী করে তুললাম। ( সবাই মনে করতে পারেন যে ছোট ছিলাম তাই একটা মেয়েকে দেখেছি তাকেই ভালো লেগে গিয়েছে । কিন্তু সেখানে অনেক মেয়ে ছিলো, তার মাঝে সবসময় একজনকেই ভালো লেগেছে। ) বেশ কিছুদিন ঢাকায় থেকে যখন মনোহরদী আসলাম, তখন আমার মন খুব খারাপ ছিলো। খুব আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমি দীপা কে সবার কথা জিগ্যেস করার ছলে শুধু বর্ণ'র কথা জানতে চাইতাম। দীপা খুব তারাতারি আমার বিষয় টা ধরে ফেলে। প্রথমে আমি এড়য়ে গেলেও পরে সত্যি টা বলে দিয়েছি। দীপা বললো " আমি তো এখানে আছি, আমি বললে হয়তো আলো আপা রাজি হবে।" আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। বেশ অনেকদিন পর দীপার সাথে আবার ঢাকা গেলাম। সেখানে থাকলাম কিছুদিন। প্রতিদিন তাকে দেখতাম আর আমার ভালো লাগা বাড়তে থাকতো। তখন আমি আসলে খুব চুপচাপ থাকতাম। ঢাকার কারো সাথেই অতটা কথা হতো না। তারা সবাই এক রুমে আড্ডা দিতো আর আমি অন্য এক রুমে চুপচাপ বসে থাকতাম। একটা কথা খুব শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে " একদিন সন্ধায় পাপন দের বাসার ছাদে আমি, বাবা, দীপা আর সব বাচ্চা রা ছাদে আসলাম। তখন পাপন দের বাসার ছাদে একটা খাট রাখা ছিলো। আমি বাবা আর দীপার সাথে দাড়িয়ে আছি এমন সময় দেখি বর্ণ জেমী কে ধরে নিয়ে গিয়ে ওই খাটে বসে কথা বলছে। বর্ণ সাদা রং এর একটা জামা পড়েছিল। তখন তাকে দেখে মনে হচ্ছিল একটা পরী কাউকে নিয়ে সেখানে বসে আছে। " যাই হোক এভাবে প্রায় ৮ মাস কেটে গেলো। এর মাঝে আমি সবার সাথেই অল্প অল্প কথা বলা শুরু করেছি। বেশী কথা বলতাম পাপন আর নাসির মামার সাথে।
তো সেই সময় আমি ঢাকায়। দীপা বলল ভালো না লাগলে আশা আন্টি, বর্ণ এবং সিজু দের বাসা থেকে ঘুরে আসতে। আমি রাজি হলাম। রাজি হওয়ার কারন ছিলো পাপন দের বাসায় আমাকে সময় দেয়ার কেউ ছিলো না। পাপন আর নাসির মামা গিয়েছে জয় মামার সাথে। যাই হোক আমি প্রথম গেলাম আশা আন্টির বাসায়। তাদের এখানে কিছুক্ষণ বসে গেলাম বর্ণ দের বাসায়। তাদের বাসায় গিয়ে দেখি আলো আন্টি ঘুমাচ্ছে। তখন আমি বললাম যে তাহলে আমি যাই পরে আবার আসবো। বর্ণ তখন বলল যে " আপনি বসেন, আম্মু এখনি উঠে পরবে। আর যদি শুনে আপনি এসে না বসেই চলে গিয়েছেন তাহলে খুব রাগ করবে। " আমি বসলাম। বর্ণ আর বর্ষ একসাথে বসে ছিলো। কিছুক্ষন কথা বলার পর বর্ণ একটা ড্রইং বের করলো। আমাকে দেখিয়ে বললো যে এটা বর্ষ'র। ড্রইং টা ছিলো একটা প্লেন। তখন আবার close up 1 হতো। সেবার প্রথম এই প্রোগ্রাম শুরু হয়। বর্ণ সেই প্লেন টা আমাকে দেখিয়ে বলছিলো যে এখানে <close up 1 এর কন্টেসটেন্ট এর নাম> এবং তার বউ বসবে। এরকম বেশ কয়েকটা দেখিয়ে সে একটা পর্যায়ে একটা জায়গা দেখিয়ে বললো এখানে আপনি এবং আপনার বউ বসবে। তখন আমি হুট করে বলে ফেলেছিলাম " ও তাই? আমার বউ তো তুমি, তারমানে তুমি বসবা।" বর্ণ অনেকটা লজ্জা পেয়ে মুখ টা লজ্জিত ভাবে হাসি হাসি করে না করলো। বললো আমি না, আপনার বউ। আমি আবারো বললাম যে হয় আমি একা বসবো আর তা না হলে যদি বউ লাগে তাহলে তুমি বসবা পাশে। এইসব বলে অনেক্ষন দুষ্টুমি করার পর আলো আন্টি ঘুম থেকে উঠলো। তারপর আলো আন্টির সাথে কতক্ষণ কথা বলে তাদের বাসা থেকে বের হলাম। সেদিন সন্ধায় সবাই বর্ন দের বাসায় যাবে ঠিক করলো। গেলাম তাদের বাসায়। আমি সোফায় বাবার সাথে বসে ছিলাম। কিছুক্ষন পর বর্ণ এসে আমাকে ডাক দিয়ে বলল যে কার্জন ভাইয়া একটু আসেন তো, কথা আছে। আমি তখন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম এবং খুব ভয় পেয়েছিলাম।
লজ্জা পেয়েছিলাম কারন বাবার সামনে থেকে একটা মেয়ের ডাকে উঠে যাচ্ছি।
আর ভয় পেয়েছিলাম কারন বিকালের ওই কথা টা যদি বর্ণ সবাই কে বলে দেয়।
যাই হোক, বর্ণ'র সাথে জেমী ছিলো। আমাকে নিয়ে সিঁড়িতে গেলো। তখন তাদের সিঁড়ির সামনে খালি জায়গাটা তে কিছু আলমারি রাখা ছিলো ওই আলমারি'র পেছনে ছিল সিঁড়িটার জানালা। আমাকে ওই জানালার কাছে নিয়ে গেল। তারপর বর্ণ আর জেমী মিলে আমাকে প্রশ্ন শুরু করলো যে বিকালে আমি ওই কথা কেন বললাম, আমি কি সত্যি বলেছি নাকি ফান করে বলেছি। আমি একবার উত্তর দেই সত্যি বলেছি আবার উত্তর দেই যে ফান করেছি। এইসব কথার এক পর্যায়ে বর্ণ বললো যে " কার্জন ভাইয়া দেখেন, এখন কিন্তু আযান দিচ্ছে। আর আযান এর সময় কেউ মিথ্যা বলে না।" আযান প্রায় শেষ মুহূর্তে ছিলো। আমি ১০ সেকেন্ড এর মত চুপ থাকতেই আযান শেষ হয়ে গেল। তখন জেমী বলল দেখেছো কত চালাক, চুপ থেকেছে যাতে আযান শেষ হয়ে যায়। তখন বর্ণ একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে সত্যি টা জানতে চাইলো। আমি কিছুক্ষন ভাবলাম, কিন্তু কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। একটা ভয় কাজ করছিলো যে সত্যি টা বলে দিলে যদি তাকে আর দেখতেও না পারি, যদি আমাকে এড়িয়ে চলে? কোন decision নিতে না পেরে বললাম যে ফান করেছি। তখন বর্ণ বললো যে " ও আচ্ছা, ঠিক আছে।" এটুকু বলে তারা চলে যাচ্ছে। আমার কাছে শুধু মনে হচ্ছে এখনি সব বলে দেয়া উচিৎ। আমি ডাক দিলাম তাদের। তারা আবার আসলো। আমি বললাম আগে যেটা বলেছি সেটা মিথ্যা, সত্যি টা হলো আমি বর্ণ কে ভালোবাসি।" বর্ণ বললো কেন ভালোবাসলেন, এখন আমি কি করবো? এইসব বলে সে বললো যে "আমি রাজি। কিন্তু এই কথা আমরা ৩ জন ছাড়া যেন অন্য কেউ না জানে।" আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর তারা আমাকে দাড়াতে বলে ঘরে গেলো। একটু পর বর্ণ একা আসলো। বলল যে ঘরে আসেন। বাইরে এতক্ষন থাকলে সবাই রাগ করবে। আমি বর্ণ কে বললাম যে একটু দাড়াও আর চোখ বন্ধ কর। সে জিগ্যেস করলো কেন? আমি বললাম এমনি তুমি চোখ বন্ধ কর। সে চোখ বন্ধ করলো। ( আমি তাকে চোখ বন্ধ করতে বলেছিলাম কারন আমি তার গালে একটা চুমু দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিতে পারিনি, কারন আমার মনে হয়েছিলো যে চুমু দিলে যদি সে আমাকে খারাপ ভাবে?) এরপর তার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। তারপর বললাম যে থাক কিছুনা তুমি ঘরে যাও আমি আসছি। সে কিছু না বলে আমার দিকে একটু সময় তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। আমিও একটু পর রুমে গেলাম। মনে মনে আমি অনেক খুশি ছিলাম। যাই হোক তার পরদিন মনোহরদী চলে আসলাম। তখন আমার কাছে মোবাইল ছিলো না। বিকালে কারো মোবাইলে আমার সিম ভরে তাকে কল দিতাম। তখন ৫০ টাকার কার্ড দিয়ে মাত্র ১৬ মিনিট কথা বলতে পারতাম। যত টাকা পেতাম সব দিয়ে শুধু কার্ড কিনতাম আর সুযোগ পেলেই তার সাথে কথা বলতাম। মাঝখানে কয়েকদিন কথা হয়নি। এর মাঝেই ঈদ হলো। ঈদ এর দিন অনেক্ষন কথা বললাম। ঈদ এর কয়েকদিন পর বর্ন রা সবাই মনোহরদী আসলো। আমি তো খুবই খুশী ছিলাম। কিন্তু আসার পর খেয়াল করলাম আমাকে সে avoid করছে। তারা ঢাকা চলে আসার আগের রাতে জানতে পারলাম যে সে নাকি আমাকে ভালোবাসে না। অনেক চেস্টা করেও কারন জানতে পারলাম না। ( বিয়ের পর অবশ্য জেনেছি কারন টা। পরে বলছি কারন টা কি ছিল। ) তারা ঢাকা চলে গেলো। আমি খুব upset হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন বাইরে একা বসে থাকতাম। তখনি আমি চিন্তা করেছিলাম যে বিয়ে করলে আমি বর্ণ কেই করবো। আর যদি তাকে না পাই তাহলে বিয়ে করবো না। তখন আমি ক্লাস ৯ এ পড়ি।
আমার কষ্টের কিছু বিবরণ (life story part 4)
যখন পারিবারিক ভাবে সব ঠিক হয়ে গেলো তার কিছুদিন পর থেকেই সব বদলে গেলো।
কারনে অকারনে আমার সাথে রাগ দেখাতে থাকলো। আমার বিন্দু পরিমাণ ভুল হলেও মাফ ছিলো না। এসব নিয়ে অনেক সময় আমার সাথে ঝগড়া পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু কেউ কখনো দেখেনি দোষ কার। সবসময় আমার মাফ চাইতে হয়েছে। এটা আমি মেনে নিয়েছি যে আমি ছোট তাই আমার ভুল না থাকলেও আমারি মাফ চাইতে হবে।
সেই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত যা কষ্ট আমি নিরবে সহ্য করেছি তা সব বর্ণনা করলে আমার এই লিখা ১ মাসেও শেষ হবে না। শুধু কিছু কথা তুলে ধরছি।
★ছোট বেলা থেকেই আমি খাবার নিয়ে খেতে পারতাম না। একদিন দুপুরে বাসায় এসে দেখি দিপা শুয়ে আছে। আমি বললাম আমি খাব। সে বলল নিয়ে খেতে, আমি বললাম তুমি তো জান আমি নিতে পারিনা। তারপর আমাকে অনেক বকা দিলো, বলল যে সে আমার চাকর না, আমার জন্য সে উঠতে পারবে না। আমার জন্য সে তার সংসার এ সুখি হতে পারে নাই। এসব শুনে আমি শুধু এটুকু বললাম যে আমার কপাল টাই খারাপ বলে খাবার নিতে গেলাম। খাবার নেয়ার সময় ঢাকনা পরে গিয়েছিলো এবং সে এই শব্দ শুনে চিল্লায়ে বলল যে ভালো মানুষের মত আচরন করতে। আমি বললাম যে আমি ভালো মানুষের মতই আচরন করি, এটা বলে প্লেট নিয়ে টেবিল এ বসলাম খাওয়ার জন্য। সে উঠে এসে আমার মাথায় ঘুশি মারলো। আর এটা তৈমুর কাকার বউ দেখেছে। সে আমাকে মেরে পরে বলে আমি নাকি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি নাকি তাকে গালি দিয়েছি। আমি সেদিন অনেক কেঁদেছি। বাবা বাসায় এসে আমাকেই দোষ দিল।
★ প্রতিটা ঈদ এ কোন না কোন কারনে সে আমার সাথে ঝগড়া করবেই। আর প্রতি ঈদ এ সে বলে যে আমার জন্য সে একটা ঈদ নাকি শান্তিতে করতে পারে নাই।
★ জয় মামার বাসায় একদিন তাদের এক বয়স্ক গেস্ট এসেছিলেন। তখন আমিও সেখানে ছিলাম। তিনি দিপা কে প্রশ্ন করলেন তার কয় ছেলে মেয়ে। অভ্র তখন আমার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। সে অভ্র কে তার কাছে নিয়ে বলল আমার এই একটাই ছেলে। আমি পাশে দাড়ানো ছিলাম। কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কখনো কাউকে কিছুই বলি নাই।
★ আমি কখনো নিজের জন্য জামা কাপড় কিনতে পারি না। তাই আমার তেমন একটা জামা নাই। যদি কখনো বাবা বা তার সামনে এই কথা টা তুলি তাহলে ২ জনেই আমাকে বলত তুমি না কিনলে আমরা কি করব? তারা তো ঠিকি জানতো যে আমি কিনতে পারি না।
★ খাবার নিয়েও অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু এসবের পিছনে আমার ব্যক্তিগত কিছু যুক্তি আছে তাই এই ব্যপারে কিছু বললাম না।
★ একদিন ঢাকা থেকে গেস্ট আসলো। তখন দিপা আমাকে বলল যে আমাকে গাড়ির গ্যাস ভরতে এবং তাদের নিয়ে ঘুরতে। আমার কাছে টাকা ছিলোনা। আমি বললাম যেই গ্যাস আছে এখন ঘুরা যাবে। ঘুরে এসে আমি গ্যাস ভরে দিবো। ঘুরে আসার পর আমার এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সন্ধায় নরসিংদী থেকে গ্যাস নিয়ে আসলাম। আসার পর আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করলো কেন তাকে না জানিয়ে গেলাম। আসলে অযথাই অযুহাত বের করত ঝগড়া করার জন্য।
★ ২০১২ সালের ঈদ এ বাবার বাইক নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার পর শুনি এটা নিয়ে অনেক ঝগড়া।
★ একদিন সকালে আপুর নানু বাড়িতে গিয়েছিলাম বাবার গাড়ি নিয়ে। বাসায় এসে দেখি তুলকালাম অবস্থা। আমরা গাড়ি নিয়ে গিয়েছি বলে সে ব্যাগ গুছিয়ে ঢাকা চলে গেল।
★ ঘুড্ডু মামার ছেলে, মেয়ে মানে আমার মামাতো ভাই বোন তারা একবার এখানে বেড়াতে এসেছিলো। তখন কি একটা বিষয় নিয়ে জানি আমার সাথে ঝগড়া শুরু করলো। একপর্যায় আমাকে বলল বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। আমি বললাম আমি কেন যাবো এটা আমার বাবার বাড়ি। তখন সে বলল তাহলে কি আমি চলে যাবো? আমি বললাম এটা তোমার শশুর বাড়ি, এখানে আমার যেমন অধিকার আছে তোমারো তেমনি অধিকার আছে। আর তুমি যাবা নাকি থাকবা এটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যপার। তারপর সে বাবা এবং সবাই কে কল করে বলল যে আমি নাকি তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছি। পরের দিন চিনি কাকা আসার পর সে রেডি হলো চলে যাবে। তখন আমি কাকা কে শুধু এটুকুই বললাম যে এখানে তো ২ টা বাচ্চা মানুষ সামনে আছে এবং তারা দিপার ভাই এর ছেলে মেয়ে। তাদের সামনেই তো সব হলো, তাদের জিগ্যেস করা হোক, তারা যদি বলে যে আমি এই কথা বলেছি তাহলে আমি এখনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু তারা কিছুই বললো না। ভয়ের কাছে সত্যি হেরে গেল। আমি কথা টা বলি নাই, তারপরেও আমি পায়ে ধরে মাফ চেয়েছি।
★ বাবা যখন apollo তে ভর্তি তখন একদিন রাতে আমি জয় মামার বাসায়। কি একটা বিষয় নিয়ে ফোনে আমার সাথে ঝগড়া করলো। বাসায় এসে আমাকে ছাদে পেল, তখন অনেক গালি দিয়ে বলল এখনি এই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে। এবং সত্যি বের করে দিয়েছিলো। আমার কাছে তখন কোন টাকা নাই। আমি হেটে রামপুরা থেকে এপোলো হস্পিটাল পর্যন্ত গিয়ে সারারাত waiting room বসে কেঁদেছি। কাউকে কিছুই বলি নাই।
★ কিছুদিন আগে যখন চিনিকাকা রা সবাই আসলো, তারপর তারা যেদিন যাবে সেদিন তারা বাস এর জন্য আমাদের বাড়ির রাস্তার মাথায় দাড়িয়ে আছে। আর আমি হাসপাতাল থেকে যেই বাসায় ভাড়া থাকি সেই বাসায় যাচ্ছি। আমাদের বাড়ির রাস্তার আগে একটা রাস্তা আছে টাওয়ার এর পাশ দিয়ে, আমি ওই রাস্তার মাথায় আসার পর দেখি অভ্র সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে, সাথে শুপ্তি। তো আমি এই রাস্তার মাথায় দাড়িয়ে অভ্র কে অনেক ডাকলাম কিন্তু সে আসলো না। তারপর যখন আমি বাসার দিকে রওনা হলাম তখন অনেকটা আসার পর দেখি শুপ্তি আমাকে ডাকছে। দেখি সে অভ্র কে নিয়ে আসছে। কাছে আসার পর আমি অভ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করলাম যে আমি ডাকলাম তুমি আসলানা কেন? অভ্র বলল তোমার সাথে কথা বললে আম্মা আমাকে মাইর দেয়। আমাকে না করেছে তোমার সাথে কথা বলতে। কষ্টে বুক টা ফেটে গিয়েছিলো কিন্তু কিছুই বলার ছিলো না।
দিপা ঢাকা যাওয়ার আগের দিন আমার সাথে দেখা করতে চাইলো, হাসপাতালের সামনে দেখা করলাম। তখন তাকে বললাম অভ্র আমার সাথে কথা বলুক বা মিশুক এটা যদি না চাও তাহলে আমাকে বল। তাকে মার কেন?
সে বলল এমন কিছুই হয় নাই। তখন আমি তার সামনে আবার অভ্র কে জিগ্যেস করলাম যে আমার সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে কি কেউ না করেছে, তখন অভ্র বলেছে যে আম্মা না করেছে। তোমার সাথে কথা বললেই আমাকে মারে। তারপর দিপা চুপ হয়ে গেলো।
শেয়ার করা যায় এমন কিছু ঘটনা এখানে লিখলাম। আরো এমন অনেক কিছু আছে যা লিখা যায় না।